Header Ads Widget

Ticker

6/recent/ticker-posts

পাইলসের কার্যকরী ঘরোয়া সমাধান এর কারণ এবং সমাধানের সহজ উপায়

পায়খানা করতে গেলে ব্যাথা করে, সাথে রক্ত যায়, পায়খানার রাস্তায় গুটি গুটি কি যেন হয়েছে সমাধান কি। আমরা অনেক রোগী দেখেছে যারা দীর্ঘদিন ধরে এই রোগে ভোগে আর উপায় না পেয়ে তবেই ডাক্তারের কাছে এসেছে। কারণ এই রোগটা নিযে আমরা অনেকেই লজ্জা পায় ডাক্তারের কাছে যেতে চাই না। ক্রমশই রোগটা জটিল হতে থাকে। আজ আমি এই রোগটির কারণ ও সমাধান খুব সহজ ভাষায় আলোচন করব। ঠিক কি কারণে কি হচ্ছে এর সবটাই আজ জানতে পারবেন।

 

১. পাইলস হলে পায়ুপথে কী হয়?

উত্তরঃ পায়ুপথ বলতে বুঝায় শরীর থেকে যে পথ দিয়ে পায়খানা বের হয়ে যায়। এই পায়ুপথের মুখ সাধারণত বন্ধ থাকে। আমদের যখন প্রয়োজন হয় তখন চাপ দিয়ে পায়ুপথের মুখ খুলে শরীর থেকে মল বা বর্জ্য বের করে দেই। এই পায়ুপথের মুখ বন্ধ রাখতে কয়েকটি জিনিস বিশেষ কাজ করে। এর মধ্যে একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো এনাল কোষ। এই কোষ তিনদিক থেকে চাপ দিয়ে পায়ুপথের মুখ বন্ধ রাখে। কোন কারণে এই কোষগুলো যদি ফুলে যায় সেগুলো থেকে রক্ত ঝরে বা যদি নিচে নেমে যায় বা পায়ুপথের চারপাশে গোটার মত হয় তখন সেটাকে পাইলস বা অর্শ্ব রোগ বলে। মেডিকেলের ভাষায় নাম হলো হেমোরোইডস।

 

২. পাইলস হলে আপনার শরীরে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে?

উত্তরঃ প্রথমত, পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে, উজ্জল লাল রংয়ের রক্ত। টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করলে সেখানে দেখা যায় রক্ত লেগে আছে, টয়লেটের কমোডে পেনে রক্ত লেগে থাকে। উজ্জল লাল রক্ত কেন বের হয়। পায়খানা বের হওয়ার সময় পায়ুপথের একবারে শেষ প্রান্তের কোষ থেকে রক্ত বের হয়েছে। রক্ত একেবারে তাজা উজ্জল লাল রং এর জমাট বাধার সুযোগ পায়নি।

দ্বিতীয়ত, পায়ুপথের কোষ গুলো ফুলে বাইরে বের হয়ে আসতে পারে তখন গুটি গুটি লাগে। আবার নিজে নিজেই ভেতরে চলে যায় বা আঙুল দিয়ে ভেতরে ঢুকাতে হয় অথবা অনেকের আর ভেতরে ঢুকেই না।

তৃতীয়ত, অনেকেই দুশ্চিন্তা করেন এই রোগ হলে কি তীব্র ব্যাথা করে। সাধারণত তীব্র ব্যাথা হয় না তবে কখনও কখনও তীব্র ব্যাথা হতে পারে। যখন পায়ুপথের বাইরে কোষগুলো বের হয়ে যায় ভেতরে ঢুকানো যায়না রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন তীব্র ব্যাথা করে। এই ব্যাথা এক থেকে দুই দিন হয়ে থাকে। তীব্র ব্যাথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

চতুর্থত, পাইলস হলে আপনার পায়ুপথে চুলকাতে পারে, পায়ুপথ দিয়ে পিচ্চিল কিছু পদার্থ বের হতে পারে। মনে হবে যে মল ত্যাগ শেষ হয়নি।

 

. পাইলসের ওষধ ঘরোয়া চিকিৎসা?

উত্তরঃ পাইলসের ওষদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা। এর জন্য একটা ভাল ওষদ হচ্ছে ইসবগুল ভূষির জুস। আমরা এর ব্যবহার সবাই জানি। তবে এর সঠিক ব্যবহার সাবধানতা অনেকের অজানা। তাই ইসবগুলের ভূষি কিভাবে খাবেন, কখন খাবেন, কখন খাওয়া উচিত না তা আলোচনা করছি। প্যাকেটের গায়ে লেখা পরিমাণ মতো পানি নিয়ে তাতে ইসবগুলের ভূষি ভালো ভাবে গুলে নিবেন। যাতে করে জুসটি দেখতে পরিস্কার বা হালকা ঘোলা দেখায়। বানানোর পর রেখে দেওয়া যাবে না সাথে সাথেই খেয়ে ফেলতে হবে। অনেক রোগীর কাছেই শুনেছি এটা নাকি গুলে রেখে দেয়। যারা এটা গুলে রেখে দেয় এটা কিন্তু সঠিক ব্যবহার নয়। সাধারণত দিনে দুই বেলা খেতে হয়। খাওয়ার পরে খেলে অনেক ভালো। এটি খেলে অন্তত দিনে দুই লিটার পানি পান করতে হবে। কিছু লোকের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রচুর পানি পান না করায় তাদের গলনালির মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তাই কেউ এই ঝুকি নিবেন না।

কিছু কিছু সময়ে এই জুস খাওয়া যাবেনা। সেগুলো হলো-

এক, রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে খাবেন না। তাতে আপনার বৃহদান্ত বা মল তৈরির জায়গার মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে অবস্ট্রাকশান। এমনটা হলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হয়। আপনার যদি এমনটা হয়ে তাহলে এটি খাবেন না।

দুই, যদি আপনার পেটে ব্যাথা হয় বা বমি বমি ভাব বা বমি হয় তাহলে খাবেন না।

তিন, এই জুস খাওয়ার পরে আপনার শরীরে যদি বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তখন খাওয়া যাবে না।

চার, যদি দীর্ঘদিন ধরে কোষ্টকাঠিন্যের কারণে আপনার পায়ুপথ মলে আটকে গেছে তাহলে খাওয়া যাবে না।

পাচ, যদি দেখেন যে আপনার পায়খানায় হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে এবং সেটা যদি তিন সপ্তাহের বেশি থাকে তাহলেও খাওয়া যাবে না।

ছয়, আগে থেকেই পায়ুপথ দিয়ে রক্ত যায় তবে এখনও এর কারণ জানা যায় নি তাহলেও খাওয়া যাবে না।

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একটানা অনেক দিন ইসবগুল ভূষি খাবেন না। এটা কিন্তু একটা ওষুধ। ডায়রিয়া সহ এর আরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তিনদিন ব্যাবহারে পরে কোষ্ঠকাঠিন্যের কোন উন্নতি না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

এবার ব্যাথার ওষুধ প্রসঙ্গ, ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষধ খেতে পারেন তাছাড়া আরও অনেক ট্যাবলেট বা মলম আছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো ব্যাবহার করতে পারেন।

পাইলস হলে কিছু কিছু ব্যাথা নাশক ওষধ ব্যাবহার করা যাবে না। সেগুলো হলো- এক, ট্রামাজল ব্যাবহার করা যাবে না। ট্রামাজল এর একটি কমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। বাজারে প্যারাসিটামলের সাথে ট্রামাজল ওষধ পওয়া যায় এগুলো এড়িয়ে চলবেন। দুই, আইভোপ্রোফেন ব্যাবহার করা যাবে না। যদি আপনার পাইলস থেকে রক্ত যায় তাহলে অনেক ঝুকি রয়েছে। কারন এই ওষধটা রক্তকরন আরও বাড়িয়ে দেয়।

. পাইলসের ব্যাথা কমানোর উপায়?

উত্তরঃ বসে বসে ওষধের পাশাপাশি আর কিভাবে বাসায় নিজের চিকিৎসা করতে পারেন বা ব্যাথা কমাতে পারেন। এর জন্য দশটি উপায় রয়েছে আর তা হলো-

এক, ব্যাথার জায়গাটা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। একটা বড় বলে কুসুম গরম পানি নিয়ে সেখানে বসতে পারেন। যারা নতুন মা হয়েছেন তারাও এই পাইলসের সমস্যায় ভোগেন। তাদেরও কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়। অথবা কোথাও বসার আগে সেখানে বালিশ ব্যাবহার করে বসতে পারেন।

দুই, একটা বরফ খন্ড নিয়ে বড় তোয়ালে দিয়ে পেছিয়ে সেটা পায়ুপথের জায়গায় লাগাতে পারেন।

তিন, বিছানায় শোয়ার সময় পা উচু করে রাখতে পারেন তাহলে পায়ুপথের কোষ গুলোতে রক্তকরণ বন্ধ হয়ে রক্ত চলাচলে সাহায্য করবে।

চার, পায়ুপথ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শুষ্ক রাখবেন। বাথরুম করার পর খুব জোর দিয়ে মুছতে যাবেন না টিস্যু দিয়ে হালকাভাবে মুছে ফেলুন।

পাচ, বাথরুম করার সময় খুব জোরে চাপ দেওয়া যাবে ন।

ছয়, অনেক লম্বা সময় নিয়ে বাথরুম করবেন না। বাথরুমে বসে মোবাইল চালানো বা কথা বলা, গেম খেলা, বই পড়াতে মনোনিবেশ করবেনা না। মোটকথা বাথরুমে বেশি সময় বসে থাকবেন না।

সাত, পায়খানার চাপ আসলে সেটা আটকে রাখবেন না। পায়খানা আটকে রাখলে দিন দিন সেখান থেকে পানি শুকিয়ে শক্ত হতে খাকে। তাই পায়খানার চাপ আসলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি বাথরুমে চলে যাবেন।

আট, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সবসময় খাবারে ফাইবার আশ জাতীয় খাদ্য নিশ্চিত করবেন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। এই দুটি কাজ করলে সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যেই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পাইলসের সমস্যার উপশম হয়।

নয়, নিয়মিত শারিরীক পরিশ্রম করতে হবে। ভারী ব্যায়াম বা প্রতিদিন দৌরাতে হবে এমন না শরীরকে চলাচল রাখতে হবে। সাধরনত স্বাভাবিক হাটাচলা ঠিক রাখুন নিয়মিত যোগ ব্যায়াম গুলো করুন।

দশ, আপনার ওজন যদি খুব বেশি থাকে তাহলে ওজন কমিয়ে ফেলুন।

. কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন?

উত্তরঃ এক, সাতদিন বাসায় থেকে পাইলসের চিকিৎসা করেও যদি কোন উন্নতি না পান।

দুই, যদি বার বার পাইলস হতে থাকে।

তিন, বয়স যদি ৫৫এর বেশি হয় এবং প্রথমবার পাইলস দেখা দেয়।

. কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?

উত্তরঃ এক, পাইলস থেকে যদি পুজ বের হতে থাকে।

দুই, যদি গায়ে খুব জ্বর আসে কাপুনি হয় এবং খুব অস্বস্থি লাগে।

তিন, যদি অনবরত রক্ত করণ হতে থাকে।

চার, অনেক বেশি রক্ত যাচ্ছে কমোডের পানি লাল হয়ে যাচ্ছে বড় বড় রক্তের চাকা যাচ্ছে।

পাচ, যদি খুব তীব্র ব্যাথা হয়।

ছয়, পায়খানা যদি আলকাতরার মত খুব বশি কালো হয়।

সবাই নিরাপদে থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন দেখা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে।

Post a Comment

0 Comments