স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়মিত পোস্টের
আলোকেই আজ আলোচনা করব একটি কমন সমস্যা নিয়ে। আর সেটা হলো এলার্জি। আপনার কি এলার্জি
আছে? আসলে এরার্জি বলতে আমরা কি বুঝি। আসলে আজ বলছি আমাদের শরীরে যে এলার্জি রোগটা
হয়ে থাকে সেটার কথাই আজ বিস্তারিত আলোচনা করব।
এলার্জি
আসলে কি?
উত্তরঃ এলার্জি
খুব সাধারণ একটি রোগ। এটি হচ্ছে আমাদের দেহের খাবার এর সাথে যে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটিই
এলার্জি। শিশুদের সাধারণত বেশিই হয়ে থাকে এলার্জিটা। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এলার্জিটা
আসলে সেরে যায়। তবে অনেকের আবার সারাজীবন এলার্জিতে ভুগতে হতে পারে। আগে কোন এলার্জি
ছিলনা এমন কোন খাবার বা বস্তুর প্রতি প্রাপ্ত বয়স্করা নতুন করে এলার্জি তৈরি করতে পারেন।
এটা খুবই স্বাভাবিক।
এলার্জি গবেষণা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক
যে সংস্থা অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড এলার্জি অরগানাইজেশন জার্নাল তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে।
২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগ এলার্জি এবং এ রোগ সংক্রান্ত রোগে ভুগছে।
এলার্জি
কিভাবে হয়?
উত্তরঃ প্রতিটি
মানুষের শরীরেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে। একে বলা হয় ইমিউনি সিস্টেম। আমাদের এই
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন ঠিকভাবে কাজ করে না বা আমাদের প্রতি ক্ষতিকর নয় এমন সব জিনিসের
প্রতি যখন প্রক্রিয়া দেখাতে শুরু করে তখনিই এলার্জি হয়। অর্থাৎ আমরা যে খাবার খাই অথবা
আমরা যে বস্তুর সংস্পর্শে আসি সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর কিনা সেটা আমাদের রোগ প্র্রতিরোধ
ক্ষমতা বুঝতে পারে না। এসব খাবার বা বস্তুর প্রতি সে একধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু
করে। যা আসলে এলার্জি।
আমাদের দেশে এলার্জিতে ভুগেন
এমন লোকের সংখ্যাও আসলে কম নয়। এলার্জিতে আসলে কি হয়। এলার্জিতে আসলে হাছি থেকে শুরু
করে চুলকানি এমনকি শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে এই এলার্জি খুব
সামান্য রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এটি সারা জীবনকে দুর্বিষহ
করে তোলে।
এলার্জির
উপসর্গ কী?
উত্তরঃ যে
বস্তুর প্রতি আপনার এলার্জি আছে সে বস্তুর সংস্পর্শে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার
এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করবে। তবে এটি আবার কয়েক ঘন্টার পরও দেখাতে পারে।
তবে আশার কথা হলো বেশির ভাগ এলার্জি মৃত ও নিয়ন্ত্রণে থাকে। মাঝে মাঝে এলার্জির কারণে
মারাত্নক ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। একে বলা হয় এনাফেলাকসিস। এছাড়াও এলার্জির
কারণে আপনার প্রথম পর্যায়ে যে রকম উপসর্গ দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হাচি, চুলকানি,
সর্দি এবং বন্ধ নাক। চোখে চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়া, পানি পরা সাধারণত দেখা দেয়।
এছাড়াও আছে শ্বাস নেওয়ার সময়
বুকে শব্দ হওয়া বা বুক ভারি হয়ে যাওয়া শরীর ও ত্বকে লাল লাল হয়ে ফুলে যাওয়া মনে হয়
এটি সবারই হয়। এছাড়াও ঠোট, চোখ এবং মুখ ফুলে যাওয়া এটিও এলার্জির বেশ বড় ধরনের লক্ষণ।
এছাড়াও আছে ত্বক শুকিয়ে যাওয়া বা লাল হয়ে গেতে যাওয়া।
তবে আপনার কোন বস্তুতে এলার্জি
আছে আপনি কিভাবে তার সংস্পর্শে এসেছেন সেটার উপর নির্ভর করে আপনার এলার্জির প্রতিক্রিয়াটা
কেমন হবে। যেমন আপনার যদি ফুলের রেণুতে এলার্জি থেকে থাকে তাহলে আপনার হাচি বা সর্দি
কাশি হতে পারে। আপনার যদি ত্বকের এলার্জি হয় তবে সেক্ষেত্রে ত্বকে রেষ হয়ে লাল হয়ে
ফুলে উঠবে। আর যদি এলর্জি রয়েছে এমন কোন খাবার আপনি খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনি সাথে সাথে
বা কিছুক্ষণ পর অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
অ্যানাফিল্যাক্সিসের
উপসর্গ কী?
উত্তরঃ এ
ধরনের এলার্জির প্রতিক্রিয়া কয়েক মিনিটের মধ্যে হয় এবং সেটা কখনও প্রাণঘাতী হতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক বেশী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দেখা যাক এই উপসর্গ আসলে
কী। গলা এবং মুখ ফুলে যাওয়া, শ্বাস কষ্ট হওয়া, ঘুম ঘুম ভাব হওয়া বা জ্ঞান হারানোর মত
অবস্থা হওয়া, প্রলাপ বকতে থাকা, ঠোট এবং ত্বক নীল হয়ে যাওয়া, পড়ে যাওয়া বা জ্ঞান হারানো
তবে পড়ে যাওয়া বা জ্ঞান হারানোর মত ঘটনা খুব একটা বেশি দেখা যায়না।
এলার্জি
হলে কী করবেন?
উত্তরঃ আপনার
যদি মনে হয় যে আপনার এলার্জি আছে তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের কাছে যেতে
হবে। বলতে হবে যে কোন কোন বস্তুর প্রতি আপনার এলার্জি রয়েছে সেগুলো কিভাবে সংস্পর্শে
আসলে আপনার এলার্জি হয়, এলার্জি হলে সেটা আপনার কতক্ষণ থাকে এবং কতবার করে হয় সেটিও
বুঝিয়ে বলতে হবে। আপনার লক্ষণ এবং উপসর্গ ও আপনার যে জিনিসের প্রতি এলার্জি রয়েছে সেটা
পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ীই চিকিৎসক আপনার ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন। তবে কোন কারণে যদি
এলার্জির উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া না যায় তবে সেক্ষেত্রে টেস্ট করাতে হবে।
এসব টেস্ট আসলে কী সেটাও একবার
জেনে নেওয়া যাক।
১.
স্কিন পিক টেস্টিং- এটির ক্ষেত্রে আপনার হাতের ত্বকের উপরে কোন
এক জায়গায় যে বস্তুতে আপনার এলার্জি আছে সে বস্তুর তরল উপাদান দেওয়া হয়। পরে সেখানে
আলতো ভাবে একটি চিদ্র করে দেখা হয় আপনার এলার্জি আছে কিনা। আপনার যদি এলার্জি থেকে
থাকে তবে ১৫ মিনিটের মধ্যে হাতের সেই জায়গা ফুলে উঠবে।
২.
রক্ত পরীক্ষা- অনেক সময় স্কীন পিক টেস্টের সাথে বা এর পরিবর্তে
রক্ত পরীক্ষা করা হয় আসলে এটা জানতে আপনার এলার্জি রয়েছে কিনা।
পেজ টেস্ট- এতে আপনার এলার্জি
রয়েছে এমন উপাদান একটি ধাতব ডিস্কের সাথে লাগিয়ে সেটি আপনার শরীরের কোন অংশে লাগিয়ে
দেওয়া হয়। তারপর ৪৮ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয় যে আসলে ঐ উপাদানের প্রতি আপনার সত্যি
সত্যি এলার্জি আছে কিনা।
৩.
এলিমিনেশান ডায়েট- এক্ষেত্রে আপনার যে খাবারের প্রতি এলার্জি রয়েছে
সে খাবার খেতে না করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট সময় পার হলে সেই খাবার আবার খেতে বলা হয়
যে সেই খাবারের প্রতি আপনার শরীর কি ধরনের প্রতিক্রিয়া করে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে
এই পরীক্ষা কখনই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করা যাবেন।
৪.
চ্যালেঞ্জ টেস্টিং- এক্ষেত্রে আপনার যে খাবারের প্রতি এলার্জি রয়েছে
সে রকম খাবার আস্তে আস্তে একটু বেশি দেওয়া হয়। এটা দেখতে যে ঐ খাবার আপনার শরীর সহ্য
করতে পারে কিনা। তবে পরীক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই হাসপাতালে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে করতে
হবে।
৫.
এলার্জি টেস্টিং কিট- বাজারে বিভিন্ন রকমের এলার্জি টেস্টিং কিট পাওয়া
যায়। তবে বেশির ভাগ সময়েই সেগুলো যথার্থ মানের হয়না।
এলার্জির
চিকিৎসা কী?
উত্তরঃ এলার্জির
চিকিৎসা ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয়। কারণ সবার এলার্জির প্রতিক্রিয়া একই বস্তু একই উপাদান দিয়ে হয় না। তবে এলার্জি যদি
নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় তবে সেক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করা যেতে পারে। যাদের খাবারে
এলার্জি রয়েছে তারা অবশ্যই খেয়াল রাখুন আপনি কি খাচ্ছেন। যাদের জীব জন্তুতে এলার্জি
রয়েছে তাদের যদি পোষা প্রাণী থেকে থাকে। তাহলে পোষা প্রাণীকে যথাসম্ভব ঘরের বাইরে রাখুন
এবং তাদেরকে নিয়মিত গোসল করান। ছত্রাকে যাদের এলার্জি রয়েছে তারা যথাসম্ভব ঘর শুকনা
রাখুন এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখুন। পরাগরেণুতে যাদের এলার্জি রয়েছে তারা
ঘাস জন্মে এমন এলাকা এড়িয়ে চলুন। বাতাসে যদি অনেক বেশি পরাগরেণু থাকে তাহলে মাস্ক ব্যবহার
করুন। যদি সেটাতেও কাজে ন দেয় তাহলে ঘরে থাকাটাই ভাল। যাদের ডাস্ট মাইন্ড বা ধূলি কণাতে
এলার্জি রয়েছে তারা এলার্জি রোধী কাথা বালিশ ব্যবহার করুন। ঘরের মেঝেতে কার্পেটের পরিবর্তে
কাঠের মেঝে ব্যবহার করুন।
এসব সতর্কতা ছাড়াও বাজারে বিভিন্ন
ধরনের এলার্জির ওষধ পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া
কোন ধরনের ওষধ সেবন করা যাবে না।
0 Comments